হিন্দুস্তানে ইলমে হাদিস যেভাবে এসেছে

                     

                   হিন্দুস্তানে ইলমে হাদিস

                                                  লেখক : মুফতি শামছুল  ইসলাম  বিন আ.হামিদ


হিন্দুস্তানে ইলমে হাদিস যেভাবে এসেছে



          বলতে গেলে উপমহাদেশের সকল মুহাদ্দিসীনে কেরামের সনদ-ই শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহরভী রহ.(মৃত্যুঃ ১১৭৬) এর সাথে মিলিত হয়। এই জন্যই শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহরভী রহ কে ‘মসনদে হিন্দ’ বলা হয়।
১০ম শতাব্দির মাঝা-মাঝি সময়ে আরব দেশসমূহে ইলমে হাদিসের  অধঃপতন শুরু হয়। তখনই আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন হিন্দুস্থানের বাসিন্দাদেরকে ইলমে হাদীস অর্জন এবং তা সংরক্ষণের প্রতি মনোযোগী করে দেন। দশম শতাব্দিতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন হাদীসের বিশাল কিতাব ‘কানযুল উম্মাল’ এর লেখক হযরত শায়খ আলী মুত্তাকী বুরহানপুরী রহ.(মৃত্যুঃ ৯৮৫)কে জন্ম দিয়ে তাকে হাদীসের খেদমতের জন্য নির্বাচিত করেন। তিনি তখন হেজাযের উলামায়ে কেরামদের থেকে ইলমে হাদীস শিক্ষা করে হিন্দুস্তানে এসে তার চর্চা শুরু করেন। তাঁর পর তাঁর প্রিয় ছাত্র শাইখ আব্দুল ওয়াহ্হাব বুরহানী রহ. (মৃত্যুঃ ১০০১) দ্বারা ইলমে হাদীসের খেদমত হতে থাকে।


  ১১তম শতাব্দিতে হযরত শাইখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ.(মৃত্যুুঃ ১০৫২) হিজায থেকে ইলমে হাদীস অর্জন করে হিন্দুস্তানের দিল্লীতে ইলমে হাদীস বিস্তারের মারকায প্রতিষ্ঠা করেন।
  ১২তম শতাব্দিতে শাইখুল মাশায়েখ হযতর শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ আহমাদ ইবনে আব্দুর রহীম মুহাদ্দিসে দেহলভী নাওয়ারাল্লাহু মারকাদাহু (মৃত্যুঃ ১১৭৬) এর যমানা আসে। তিনি হেজায গিয়ে সেখানের মাশায়েখ বিশেষভাবে হযতর আবু তাহের মাদানী রহ.থেকে ইলমে হাদীসের জ্ঞান অর্জন করেন। এরপর হিন্দুস্তানে এসে দ্বীনি খেদমত বিশেষভাবে ইলমে হাদীসের খেদমতে সদা-সর্বদা নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। তাঁর সময়ই হিন্দুস্তানে ‘ছিহাহ্ সিত্তাহ্’ অর্থাৎ হাদীসের ছহীহ্ ছয় কিতাব (ছহীহ্ বুখারী,ছহীহ্ মুসলিম,সুনানে তিরমিযী,সুনানে আবু দাঊদ,সুনানে নাসাঈ,সুনানে ইবনে মাজাহ্) এর দরস-তাদরীসের ধারাবাহিকতা শুরু হয়।
১৩তম শতাব্দিতে শাহ্ ওলীউল্লাহ্ মুহাদ্দেসে দেহলভী রহ.এর ছাত্র এবং সন্তানাদিদের দ্বারা হাদীসের খেদমত শুরু হয় । যেমন শাহ্ ওলীউল্লাহ্ মুহাদ্দেসে দেহলভী রহ.এর ছেলে শাহ্ আব্দুল আযীয রহ.(মৃত্যুঃ ১২৩৯) এরপর শাহ্ ওলীউল্লাহ্ মুহাদ্দেসে দেহলভী রহ.এর নাতী শাহ্ মুহাম্মাদ ইসহাক সাহেব রহ. (মৃত্যুঃ ১২৬২) এরপর তাঁর ছাত্রদের থেকে হযতর শাহ্ আব্দুল গণী মুজাদ্দেদী রহ.(মৃত্যুঃ ১২৯৬) হাদীসের দরসের দায়িত্ব পালন করেন।


পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৪ তম শতাব্দিতে কুতুবুল আরশাদ হযরত মাওলানা রশীদ আহমাদ গঙ্গুহী রহ.(মৃত্যুঃ ১৩২৩) দশ বছর পর্যন্ত সমস্ত দাওরায়ে হাদীসের কিতাবাদিকে একাকি পড়ান। তাঁরপর তাঁরই সুযোগ্য ছাত্ররা অর্থাৎ দারুল উলূম দেওবন্দ এবং দারুল উলূম মুজাহিরুল উলূমের ছাত্রগণ হাদীসের দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মধ্য থেকে হযরত মাওলানা ইয়াহ্য়া ছাহেব কান্দলভী রহ.স্মরণযোগ্য। কারণ তিনি আমাদের সনদের মধ্যে আসেন। দ্বিতীয়ত কথা হলো,হযরত মাওলানা ইয়াহ্ইয়া ছাহেব কান্দলভী রহ.এর মাধ্যমেই হযরত রশীদ আহমাদ গঙ্গুহী রহ.এর হাদীসের খেদমত এবং তাঁর দরসের তাকরীরাতসমূহ কিতাব আকারে আমাদের সামনে আসে।

মাওলানা ইয়াহ্ইয়া ছাহেব কান্দলভী রহ.এর পর তাঁরই সুযোগ্য সন্তান শাইখুল হাদীস যাকারিয়্যা রহ.হিন্দুস্তানে হাদীসের খেদমত আঞ্জাম দেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে আমরাও অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যেমনিভাবে তাদের সনদের সাথে আমাদেরকে মিলিয়েছেন;তদ্রুপ বাস্তবেও আমাদেরকে ঐসকল মুহাদ্দিসীনে কেরামের কাতারে শামিল করুন। আমীন,ইয়া রাব্বাল আলামীন।



Previous Post Next Post